Educational

পড়াশোনার ৫টি বদ অভ্যাসের সহজ সমাধান


পড়াশোনায় ভালো করতে হলে কী কী করতে হবে, কী কী করা উচিত-এসব তো কমবেশি আমরা সবাই জানি। তবে কী কী করা উচিত না, কিংবা কোন কোন অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত তা নিয়ে কি কখনো ভেবেছি?

অভ্যাসবশতই আমরা অনেক সময়ে এমন কাজ করে থাকি যার ফলে হাজার চেষ্টা করেও আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অথচ এই দিকগুলোতে একটু কৌশলী হলে তুমিও এগিয়ে যেতে পারবে সাফল্যের দিকে। চলো দেখে নেই সেই বদ অভ্যাস এবং তার সমাধানগুলো।

১। ক্লাস চলাকালীন শিক্ষকের উচ্চারিত প্রতিটি বাক্য হুবহু লিপিবদ্ধ করা:

আমরা অনেকেই ক্লাস লেকচার খাতায় তোলার সময়ে শিক্ষকের বলা কথা হুবহু একনাগাড়ে লিখে যাই। যার ফলে ক্লাসের পুরোটা সময় লেখার পেছনেই ব্যয় হয়ে যায়, পড়া বুঝার আর সুযোগ পাওয়া যায় না। আবার না বুঝে হুবহু লিপিবদ্ধ করার ফলে দেখা যায় পরে ওই বিষয়গুলো নিজের কাছেই অপরিচিত লাগে, কঠিন মনে হয়।

এজন্য লেকচার লেখার সময়ে চেষ্টা করতে হবে যথাযথ সংক্ষেপে এবং কী-পয়েন্ট আকারে মূল বিষয়বস্তু তুলে ধরার। একনাগাড়ে সব লেখার চাইতে বিভিন্ন চিহ্ন এবং ছকের মাধ্যমে বিশাল বিষয়গুলোকে সংক্ষিপ্ত আকারে নিয়ে আসা ভালো।

২। অতিরিক্ত হাইলাইট করা:

অতিরিক্ত হাইলাইট করে বইয়ের প্রতিটি পাতা ভরিয়ে ফেললে দিন শেষে লাভের খাতা শূন্যই থেকে যাবে! চেষ্টা করতে হবে বেছে বেছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাক্য, নতুন শব্দ কিংবা শিরোনাম গুলো দাগানোর।

এক্ষেত্রে ভালো বুদ্ধি হলো “কালার-কোড” স্ট্র্যাটেজি প্রয়োগ করা। অর্থাৎ একেক বিষয়ের জন্য একেক রঙের কালি ব্যবহার করা, যেমন- নতুন শব্দ গুলোর জন্য এক রঙের, সংজ্ঞাগুলো আরেক রঙের কালি দিয়ে দাগিয়ে ফেলা। তাছাড়া অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং কম গুরুত্বপূর্ণ- এই ভিত্তিতেও বিভিন্ন কালির ব্যবহার করা যেতে পারে।

৩। একই অধ্যায় বারবার পড়া:

আমাদের ছোটবেলা থেকেই যেকোন অধ্যায় বারবার পড়ার অভ্যাস করানো হয়। তবে, বারবার না বুঝে কোনো অধ্যায় পড়ার চেয়ে একবার মনোযোগ দিয়ে বুঝে পড়াই যথেষ্ট। তবে, প্রথমবার পড়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই হাতে কালো ব্যতিত অন্য কালির কলম নিয়ে বসতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও প্যারাগ্রাফগুলো চিহ্নিত করে ফেলতে হবে। এতে একবার সেই অধ্যায়টি পড়ার পর পুনরায় পুরো অধ্যায়  পড়ার প্রয়োজন হবেনা, শুধু দাগানো অংশগুলো বারবার পড়ে লিখে ফেললেই চলবে।st

শেষ মুহূর্তের জন্য অর্থাৎ পরীক্ষার আগের দিনের জন্য পড়া জমিয়ে রাখা বদ অভ্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম

৪। পড়ার সময়ে ঘনঘন বিরতি নেয়া এবং মোবাইল ফোন ব্যবহার করা:

একটানা কিছুক্ষণ পড়ার পর একঘেয়েমি লাগে, তাই পাঁচ মিনিট পড়ে দশ মিনিট বিরতি নেয়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে আমাদের। হয়ত ৭টায় পড়া শুরু করে হঠাৎ ফোনের নোটিফিকেশন আসে, ৫ মিনিটের জন্য ফোন চেক করতে গিয়ে ঘড়ির কাঁটা ৮টা বা ৯টায় গিয়ে ঠেকে।

কিংবা ফোনে ডিকশনারি দেখতে গিয়ে ফেসবুক, ইউটিউবে কখন যে বুঁদ হয়ে যাই খেয়াল থাকে না! এভাবেই হাতের আশেপাশে মোবাইল রাখায় প্রচুর সময় এবং একইসাথে মনোযোগের অপচয় ঘটে। তাই পড়ার সময় যেকোনো গ্যাজেট দূরে রাখতে হবে এবং ঘন ঘন বিরতি না নিয়ে এক বা দেড় ঘন্টা পরপর বিরতি নিতে হবে।

৫। শেষ মুহূর্তের জন্য পড়া জমিয়ে রাখা:

শেষ করছি একটি গল্প দিয়ে। ফাহিম প্রত্যেক পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়ার পর আশানুরূপ ফলাফল না পেয়ে প্রতিজ্ঞা করে এরপর থেকে সে দিনের পড়া দিনেই শেষ করবে। তবে স্কুল থেকে ফিরে প্রতিরাতে পড়তে বসলেই “আজকে না, কালকে পড়বো”- এটা ভাবতে ভাবতেই তার দিন কেটে যায়, পরীক্ষার দিন ঘনিয়ে আসে।

ফলে সে সিলেবাসের বিশাল অংশ পরীক্ষার আগের রাতে শেষ করতে হিমশিম খায়। এভাবে এই পুরো ব্যাপারটি একটি চক্রের মত ফাহিমের জীবনে ঘুরপাক খেতে থাকে!

সুতরাং শেষ মুহূর্তের জন্য অর্থাৎ পরীক্ষার আগের দিনের জন্য পড়া জমিয়ে রাখা বদ অভ্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম। জমিয়ে না রেখে বরং প্রতিদিন অল্প করে পড়া এগিয়ে রাখলেও পরীক্ষার আগে ফাহিমের মত হিমশিম খেতে হবে না!


Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.