Educational

সামাজিক দক্ষতাগুলো জানা আছে তো?


আমি যখন ৮ম শ্রেণিতে পড়ি তখন আমাদের স্কুলে সায়েন্স ফেয়ারের আয়োজন করা হয়। আমাদের ক্লাস থেকে আমরা দুই বন্ধু একটি প্রজেক্ট জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। মূল অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র একজনই উপস্থাপন করতে পারবে বলে শিক্ষক আমাদের যাচাই করেন। দুজনই আমরা একই কথা বলা সত্ত্বেও শিক্ষক আমার বন্ধুর কথায় খুবই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। মনে মনে আমি অনেক ভাবলাম। দুজনই একই কথাই মুখস্থ করে বলেছিলাম, তবে সে বন্ধুটির কথায় এমন কী ছিল যেটি আমার মধ্যে ছিল না?

উত্তর আমি সেইদিন পেয়েছি যেইদিন Emotional intelligence সম্পর্কে জানতে পারি। Emotional intelligence বলতে বুঝায় বুদ্ধিমত্তার সাথে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা এবং আবেগকে প্রয়োগ করা। যার Emotional intelligence যত বেশি, তাকে পছন্দ করার সম্ভাবনাও তত বেশি। এই Emotional intelligence তৈরি করার জন্য প্রয়োজন কিছু সামাজিক দক্ষতার।

1-22-768x576.jpg

আজকের লেখাটিতে সেসব সামাজিক দক্ষতাগুলো নিয়েই কথা বলবো।

১। Eye-Contact:

কারো সাথে প্রথম সাক্ষাৎকারেই আমরা যে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেই তা হলো সে মানুষটি বিশ্বস্ত কি না। বিশ্বাসের পরই আসলে প্রশ্ন আসে পছন্দ করার। আসলে এই সিদ্ধান্তটি মানুষ তার অবচেতন মনেই নিয়ে থাকে, এমনকি কোন রকম যৌক্তিক ব্যখ্যা ছাড়াই। যার সাথে কথা বলছো তাকে উপলব্ধি করানো খুব জরুরি যে, তার কথা তোমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।

চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বললে সে গুরুত্বটি অনেক বেশি প্রকাশ পায়। সুতরাং, যে বিষয়ে কথা বলছো সে বিষয়ে যদি তোমার ধারণা কমও থাকে, তাও মনে হবে তুমি তার কথায় আগ্রহী এবং যার সাথে কথা বলছো তার মনে তোমার ব্যাপারে পজিটিভ ধারণা তৈরি হবে।

২। মোবাইল ফোন দূরে রাখো:

কথা বলার সময় তুমি যদি বারেবারে তোমার মোবাইল ফোন চেক করো, তবে অনেক সময় তা অপর পক্ষকে অপমানিত বোধ করাতে পারে। তুমি হয়তো তার কথা মনোযোগ দিয়েই শুনছিলে, কিন্তু যার সাথে কথা বলছো এই বিষয়টি তিনি পছন্দ নাও করতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় কথা বলার সময় মোবাইল ফোনকে এড়িয়ে চললে। এমনকি কারও সাথে কথা বলা শেষ না করেই অন্যের সাথে কথা বলতে শুরু করে দেয়াও খুব ভালো দেখায় না।

2-15-768x569.jpg

৩। আগে শোনার ওপর গুরুত্ব দাও:

কোন একটা আলোচনায় যোগ দিতে গেলে আগে শোনো বক্তা কী বলছে। হুট করে কোন মন্তব্য করা বোকামির কাজ। মূল বিষয়টি নিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করো। কোন বিষয় নিয়ে দ্বিধান্বিত হলে তাকে প্রশ্ন করো। তারপর সে বিষয়ে তোমার মন্তব্য প্রদান কর। এটিই আসলে প্রমাণ করে তুমি বক্তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলে।

৪। ভালো কাজের প্রশংসা করো:

প্রশংসা করা মানেই তেল মারা নয়। কারো কোন কাজ তোমার ভালো লাগলে এমন ভঙ্গিতে বলো যেন সেটিতে আন্তরিকতা প্রকাশ পায়। অন্যদিকে কেউ যদি তোমার কাজের প্রশংসা করে, কোনভাবেই যেন তোমার উত্তরে অহংকার প্রকাশ না পায়। তোমার উত্তরে যেন নম্রতা প্রকাশ পায় এবং সেটি অবশ্যই যেন তোমার অভিব্যক্তিতেও ফুটে উঠে।

৫। Body Language:

অনেক সময় তোমার Body Language দেখেই অনেকে তোমার সম্পর্কে ধারণা করে নেবে। প্রথমবার কারো সাথে কথা বলতে গেলে কোনভাবেই যেন Negative body language প্রকাশ না পায়।

৬। অভিযোগ কোরো না:

তুমি কি কারো কাছে Negative person হিসেবে পরিচিত হতে চাও? না, কেউ তা চায় না। তবে তোমার কথায় কখনোই অভিযোগ প্রকাশ কোরো না। তুমি অনেক কিছু নিয়েই দুশ্চিন্তায় থাকতে পারো, তবে তা যেন তোমার কথায় কখনোই প্রকাশ না পায়। মনে রাখবে, যার সাথে কথা বলছো তার সাথে তোমার সম্পর্ক অনেকাংশেই প্রথম সাক্ষাৎকারের উপর নির্ভর করে।

৭। কথোপকথন ঠিকভাবে শেষ করছো তো?

ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে হলে কথোপকথন সঠিকভাবে শেষ করার উপর গুরুত্ব দাও। কথোপকথন শেষে যার সাথে কথা বলছিলে তাকে জানাতে পারো তার থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছো কিংবা তার সাথে কথা বলে তোমার কতটা ভালো বোধ হচ্ছে।

সামাজিক দক্ষতা একটি দুর্লভ গুণ। একবার এই দক্ষতাগুলো আয়ত্ত করে নিলে দেখবে অন্যকে প্রভাবিত করতে, নিজের চিন্তাভাবনাগুলোকে অন্যের কাছে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে, সহযোগিতার মনোভাব প্রকাশ করতে আর বেগ পেতে হবে না।

Facebook Page

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.